যেকোনো সমস্যা ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর প্রতি তাওয়াককুল করার মধ্যে শিফা বিদ্যমান। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া বিদান অনুসরণ করা।সেইক্ষেত্রে আপনার গলায় যদি যেকোনো ধরনের কাটা লেগে থাকে আর এতে আপনার তীব্র ব্যাথা বা যন্ত্রণা হয়ে থাকে তাহলে আপনি কিভাবে আল্লাহ কাছে তার জন্য শিফা চাইবেন অর্থাৎ গলায় কাটা নামানোর দোয়া কিভাবে করবেন।
গলায় কাটা নামানোর দোয়া সম্পর্কে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেয়া কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই এবং কুরআন ও সহি-হাদিসেও এর সুস্পষ্ট বা সু-নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই।তবে বিশ্বস্ত আলেম ও ফকির দের মতে কুরআনের কিছু আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে এথেকে শিফা পাওয়া যায়।
যেসব আয়াত ও দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আপনি শিফা পেয়ে থাকবেন তার বিস্তারিত তথ্য এখান থেকে জেনে নিতে পারবেন। এখানে সকল তথ্য ফকিহগণ দের দেয়া তথ্য থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর দেরি না করে ধৈর্যতার সাথে সম্পন্ন আর্টিকেল-টি পড়ে জেনে নিনি গলায় কাটা নামানোর দোয়া কি এবং সেটা পাঠ করার নিয়ম।
গলায় কাটা নামানোর দোয়া
যেকোনো বিপদের সময় রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করতেন এবং সাহাবায়েদের তা পাঠ করার নির্দেশ দেন। তারই পেক্ষাপটে ফকিহগন গলায় কাটা লেগে গেলে এই দোয়া পড়ে আল্লাহ কাছে শিফা চাওয়ার কথা বলেন।
দোয়া;
اللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُউচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। ইয়া হাইয়্যু ইয়্যা কাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীস।
বাংলা অর্থ :“আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। হে চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী আল্লাহ! আপনার রহমতের মাধ্যমে আমি সাহায্য চাই।”(তিরমিযি, আবু দাউদ)
যেহেতু রাসূল ﷺ বিপদের সময় এই দোয়া পাঠ করতেন, তাই গলায় কাটা বা হঠাৎ বিপদে পড়লে এটি পড়া সর্বোত্তম।
তাছাড়া গলায় কাটা নামানোর দোয়া এর মধ্যে আরেকটি কার্যকরী দোয়া হল নবী আইয়ুব (আঃ) এর দোয়া, তিনি যখন অসুস্থতার তীব্র ব্যাথা কাতর ছিলেন তখন আল্লাহ কাছে নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করে শিফা চেয়ে ছিলেন এবং তিনি তৎক্ষনাৎ সুস্থতা বুধ করেন ও হারনো সকল কিছু আল্লাহ পূর্বের ন্যায় করে দেন।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের সূরা আল-আম্বিয়া এর ৮৩ থেকে ৮৪ নং আয়াতে নবী আইয়ুব (আঃ) এর এই দোয়ার ফজিলতের কথা উল্লেখ করেন।
দোয়া;
رَبِّ إِنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ: রব্বি ইন্নি মস্সানিয়াদ্ দুর্রু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমীন।
বাংলা অর্থ: “হে আমার পালনকর্তা! আমাকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছে, আর আপনি সর্বদয়দের মধ্যে সর্বাধিক দয়ালু।”
দোয়ায় কুরআনের যে আয়াত পাঠ করবেন
সকল বিপদে বা গলায় কাটা নামানোর দোয়া’র ক্ষেত্রে কুরআন এর যে সমস্ত আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে শিফা লাভ করা যায় বলে মহানবী সাল্লাল্লাহু পাঠ করতে বলেছেন।
| ক্র. | দোয়া (আরবি) | উচ্চারণ | বাংলা অর্থ | সূত্র (সূরা: আয়াত) |
|---|---|---|---|---|
| ১ | رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ | রব্বানা যালামনা আনফুসানা, ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়াতারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরীন | হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। | সূরা আল-আ‘রাফ (৭:২৩) |
| ২ | رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ | রব্বি ইন্নি আউযু বিকা আন আসআলাকা মা লাইসা লি বিহি ইলম | হে আমার পালনকর্তা! যে বিষয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই। | সূরা হুদ (১১:৪৭) |
| ৩ | رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي | রব্বিশরাহলি সদরি, ওয়াইয়াস্সিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল লিসানি, ইয়াফকাহু কাওলি | হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ প্রশস্ত করুন, আমার কাজ সহজ করুন, আমার জিহ্বার জড়তা দূর করুন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। | সূরা ত্বাহা (২০:২৫–২৮) |
| ৪ | رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا | রব্বি যিদনি ইলমা | হে আমার পালনকর্তা! আমাকে জ্ঞানে বৃদ্ধি দিন। | সূরা ত্বাহা (২০:১১৪) |
| ৫ | رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ | রব্বিজআলনি মোকিমাস সালাহতি ওয়া মিন যুররিয়্যাতি, রব্বানা ওয়াতাকাব্বাল দুআয় | হে আমার পালনকর্তা! আমাকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমার দোয়া কবুল করুন। | সূরা ইবরাহীম (১৪:৪০) |
| ৬ | رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ | রব্বি আওযিঅনি আন আশকুরা নি‘মাতাকা আল্লাতি আনআমতা আলাইয়া ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা সালিহান তারদাহু | হে আমার পালনকর্তা! আপনি যে অনুগ্রহ আমার ও আমার পিতামাতার উপর করেছেন, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমাকে সক্ষম করুন এবং এমন সৎকাজ করতে দিন যা আপনি পছন্দ করেন। | সূরা নামল (২৭:১৯) |
| ৭ | رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِي مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِي مِن تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ | রব্বি কদ আতা’ইতানী মিনাল মুলকি ওয়া আল্লামতানী মিন তা’উইলিল আহাদীস, তাওয়াফ্ফানি মুসলিমান ওয়া আলহিকনি বিসসালিহীন | হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে শাসনক্ষমতা দিয়েছেন ও স্বপ্ন ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন। | সূরা ইউসুফ (১২:১০১) |
| ৮ | رَبِّ إِنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ | রব্বি ইন্নি মস্সানিয়াদ দুর্রু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমীন | হে আমার পালনকর্তা! আমাকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছে, আর আপনি সর্বদয়দের মধ্যে সর্বাধিক দয়ালু। | সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৮৩) |
| ৯ | لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ | লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমীন | আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; আপনি পবিত্র; নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত। | সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৮৭) |
| ১০ | رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ | রব্বি লা তাযারনী ফারদান ওয়া আনতা খাইরুল বারিসীন | হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একাকী করে রেখো না; আপনি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী। | সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৮৯) |
| ১১ | رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ | রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান্নার | হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন, পরকালে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। | সূরা আল-বাকারা (২:২০১) |
| ১২ | رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ | রব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাওঁ ওয়া সাব্বিত আকদামানা ওয়ানসুরনা আলাল কওমিল কাফিরীন | হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করুন, আমাদের পদক্ষেপ দৃঢ় করুন এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। | সূরা আল-বাকারা (২:২৫০) |
তাছাড়া গলায় কাটা নামানোর দোয়া হিসাবে সূরাঃ আল-আনাম এর ৬৩নং আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে ফজিলত পাওয়া যায়।
قُلْ مَن يُنَجِّيكُم مِّن ظُلُمَٰتِ ٱلْبَرِّ وَٱلْبَحْرِ تَدْعُونَهُۥ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً لَّئِنْ أَنجَىٰنَا مِنْ هَٰذِهِۦ لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّٰكِرِينَ
উচ্চারণ :কুল মাইঁ ইউনাজ্জীকুম মিন জুলুমা-তিল বাররি ওয়াল বাহরি তাদ‘ঊনাহূতাদাররু‘আওঁ ওয়া খুফইয়াতাল লাইন আনজা-না-মিন হা-যিহী লানাকূনান্না মিনাশশা-কিরীন।
অর্থ; আপনি বলুনঃ কে তোমাদেরকে স্থল ও জলের অন্ধকার থেকে উদ্ধার করেন, যখন তোমরা তাঁকে বিনীতভাবে ও গোপনে আহবান কর যে, যদি আপনি আমাদের কে এ থেকে উদ্ধার করে নেন, তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
খাবার খাওয়ার সময় আমাদের অসাবধানতার কারণে অনেক সময় আশংকা জনক ভাবে এই ধরনের ঘটনা গঠে যায়, যার থেকে শিফা পাওয়া জন্য গলায় কাটা নামানোর দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শিফা চাওয়া সর্বোত্তম।
জেনে নিন: লম্বা হওয়ার দোয়া ও পাঠ করার নিয়ম


